'''ভাস্কর্যই কি এক মাত্র সমস্যা ? ''
=======================
বাংলাদেশ একটি শান্তি প্রিয় অসম্প্রদায়িক মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ প্রগতিশীল রাষ্ট্র। এই দেশে বিভিন্ন ধর্ম ,বর্ণ , বাঙালি ,অবাঙালি ,উপজাতি/আদিবাসী ও নানা মতাদর্শের জনগোষ্ঠী, যার যার ধর্ম ও যার যার চিন্তা চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে সহমর্মিতার সাথে অনাদীকাল থেকে একত্রে বসবাস করে যাচ্ছে । এখানে নেই জাতিগত ও সাম্রদায়িক দ্বন্দ্ব। রয়েছে ভিন্ন মত, ভিন্ন পথের সহজ-সরল মানুষ , সকলেই , সকলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যার কারণে শত বাধা বিপত্তি, ঘুষ ,দুর্নীতি থাকার পরও এই দেশটি উন্নতির পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে, বিশ্ব অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় অবস্থানের কারণে, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ আজ অনেক দেশের কাছে আদর্শ। এই অবস্থান আমাদের ধরে রাখতেই হবে, কারণ আমরা চাই দেশটিকে উন্নত সমৃদ্ধশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে। এর জন্য দরকার সামাজিক , রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তবে এটা ও লক্ষ করলে দেখা যায়, কিছু সংখক মানুষ রয়েছে যারা উন্নতি, অগ্রগতির পথে অন্তরায় ও ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। তারা মনে করেন তাদের ধর্ম, তাদের চিন্তা, তাদের পথই হলো সর্বোৎকৃষ্ট । হতে পারে তাদের মত ,তাদের ধর্ম সর্বোৎকৃষ্ট , কিন্তু এসব নিয়ে অন্য কে হেয় প্রতিপন্ন করে যেভাবে সমাজে বিষবাস্প ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ,এটা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। একটি রাষ্ট্রের প্রাণ হচ্ছে জনগণ, এই জনগণের মধ্যে একতা ,ভাতৃত্ব বোধ নষ্ট করার লক্ষে যদি কোন গুষ্ঠি অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়, তা কোন ভাবেই কাম্য হতে পারে না। রাষ্ট্রের উচিত এদেরকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করা।
মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে পীর,মাশায়েখ,আলেম সমাজ,সকলের কাছে অতন্ত্য শ্রদ্ধার পাত্র । মাদ্রাসা,মসজিদ ও ধর্মীয় ওয়াজের সাথে যুক্ত আলেম সমাজের,প্রতিটি কথা সাধারণ মুসলিম জনসাধারণ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে, বিনা প্রশ্নে, ইসলামের আদর্শ মনে করে, জীবন আদর্শের সাথে যুক্ত করে । ধর্মীয় সম্প্রিতি রক্ষায় ও প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক জীবন গঠনে আলেম সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু কিছু সংখক আলেমদের মধ্যে একটি প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে যে, তারা মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ,সংবিধান ,শহীদ মিনার, ভাস্কর্য ,সংষ্কৃতি, আঞ্চলিক কৃষ্টি, ভিন্ন মত ও অন্য ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা ও বিদ্বেষ মূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। যা আমাদের সামগ্রিক সামাজিক, মানবিক মূল্য বোধের মধ্যে বিভাজন তৈরির অপ:চেষ্টার-ই সামিল। এই তথা কথিত আলেমদের কার্যকলাপে তাদের আসল উদেশ্য নিয়ে সন্ধিহান হতেই হয়।
বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশে রেডিও, টেলিভিশন , ইউটিউব , ফেসবুকে যে ভাবে অশ্লীল গান বাজনা ,নাটক সিনেমা চলছে এবং যার কারণে বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক অনাচার ,ধ্বংস হচ্ছে কোমলমতি অল্পবয়স্ক ছেলে মেয়েদের চরিত্র। ভিন দেশীয় অশ্লীল সংস্কৃতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছে মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। তথ্য প্রবাহের অবাধ যুগে যেভাবে আমাদের সমাজে অশ্লীলতার ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে , এটি নজির বিহীন ,যা আমাদের ধর্ম ,ঐতির্য সংস্কৃতি ধ্বংসের সুদূর প্রসারী অপচেষ্টা। কিন্তু ,কোথায় আমাদের আলেম সমাজ ? তারা কি, তাদের চর্ম চোখে এইসব দেখতে পান না ? তথা কথিত আলেমদের কাছে এই বিষয় সমূহ কি , গুরুত্ব পূর্ণ মনে হয়না ? কেনই-বা তাদের কাছে শুধুই গুরুত্বপূর্ন মনে হচ্ছে ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা বা ভাস্কর্য হতে না দেওয়া ? তাহলে কি অশ্লীল গান বাজনা ,নাটক সিনেমা এই সব ইসলামে জায়েজ ? আপনারা তো রেডিও টেলিভিশন অবরোধ করা-সহ ফেইসবুক , সিনেমা ,নাটকের অশ্লীলতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারতেন ! কিন্তু আপনারা এই বিষয়ে অজানা কারণে সব সময় চুপ থেকেছেন ?
কারণ খোঁজার চেষ্টা করে মাথায় হাত দিয়ে বসে যখন ভাবছিলাম ,তখন আমার এক বন্ধু 'আরিফ' আমাকে বললো কিরে, কি, এতো ভাবছিস ? আমি বললাম বন্ধু আমি তো গভীর চিন্তায় পরে গেলাম ,অশ্লীল গান-বাজনা ,নাটক সিনেমা এইসব বন্ধ করা নিয়ে হুজুরা আন্দোলন না করে ভাস্কর্য নিয়ে কেন এতো আন্দোলন করছে ? আমার কথা শেষ হতে না হতেই বন্ধু বলে বসলো অরে বেটা, এইটা নিয়ে এতো ভাবতে হয়।।।। হুজুররা কি মানুষ না , তাদের কি বিনোদন লাগে না ? গান বাজনা নাটক সিনেমা , এইসব হলো বিনোদনের প্রধান উপকরণ , এটা অশ্লীল হোক আর নাই বা হোক। শুনেছি তারাও নাকি মাঝে-মাঝে , গোপনে ,চিপা-চাপায় বসে নীরবে এই বিনোদন উপভোগ করেন ,তবে সব সময় না, যখন শয়তানে ধরে, এটা কিন্তু তাদের দোষ না , শয়তানের দোষ। হা হা ভাস্কর্য এইটা আবার কি ।।।। ? অনেক তথা কথিত হুজুরা মনে করেন , কি এক মূর্তি, রাস্তার কোনায় দিন রাত ২৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে !! কথা বলতে পারেনা , নড়া-চড়াও করতে পারেনা , কাক মাথায় বসে হাগু করলেও , কাকটা পর্যন্ত সড়াতে পারেনা, অন্দকারে ভুতের মতো মনে হয় ,কত হুজুর , কত পোলাপাইন রাতের বেলায় ঘর থেকে বের হয় না ভাস্কর্যের ভয়ে। এই ভুতরে জিনিষটা আবার কি করে ইতিহাস ঐতির্যের ধারক বাহক হয় ? এটা মানবতার শক্র , ধর্মের শক্র। এটা কোনো ভাবে বরদাশত করা যায়না, এটা ভেঙে ফেলতেই হবে ,প্রয়জনে জীবন দিবো তারপরেও ভাস্কর্য উৎখাত করতে হবেই । আমি বললাম ,দুস্তো তোর কথা হাস্যকর হলেও যুক্তি যে নাই তা বলবোনা , তবে আমার মনে হচ্ছে ভাস্কর্যের সাথে রাজনীতির কেমন জানি একটা সম্পর্ক আছে , এই বিষয়টা নিয়ে ঝামেলা পাকালে বাংলাদেশের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করা সম্ভব।
মহানবী ভাস্কর্য ভেঙে ছিলেন পবিত্র কুরআন ,হাদীছে এর যথেষ্ট প্রমাণ ও রয়েছে , এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। প্রশ্ন থেকে যায় , মহানবী কোন স্থানের মূর্তি অথবা ভাস্কর্য ভেঙে ছিলেন ? উত্তর হবে এক কথায় , ''কাবা শরীফের'' । এই কাবা শরীফ হলো মুসলিম জাহানের তীর্থ স্থান ,যাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব-মুসলিম এবাদত করে থাকে। যেখানে ইসলামে মূর্তি পূজা সম্পূর্নই নিষিদ্ধ , সেখানে কি করে মূর্তি অথবা ভাস্কর্য এই পবিত্র কাবা শরীফে থাকতে পারে ? সঙ্গত কারণেই কাবা শরীফে অথবা এর আসে পাশে যদি কোন মূর্তি অথবা ভাস্কর্য স্থাপন করা হয় ,প্রতিটা মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব এটিকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকার ধুলাই খালকে মুসলিম জাহান কি তীর্থ স্থান মনে করে ? নাকি এই স্থানকে কেন্দ্র করে আমরা মুসলিমরা কোনো প্রকার ইবাদত করি ? যদি উত্তর না হয় ,তাহলে কেন কিছু সংখক আলেম নামধারী ব্যাক্তিরা ঢাকার ধুলাই খাল এলাকাকে এতো গুরুত্ব দিচ্ছেন ? কেন এখানকার মূর্তি বা ভাস্কর্যের বিরোধিতা করাকে ঈমানী দায়িত্ব মনে করছেন ? যে কোনো সাধারণ মানুষের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, কাবা শরীফের মূর্তি থাকা, না থাকা ,আর ধোলাই খালের মূর্তি থাকা কি, এক কথা হতে পারে ? আপাত দৃষ্টিতে যা দেখা যাচ্ছে বিষয়টি এক বিষয় নয়। তাহলে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ধোলাই খালে ভাস্কর্য স্থাপন কোনো ভাবেই ধর্মীয় বিষয় হতে পারে না। তবে কেন এতো বিতর্ক ? তাহলে বুঝতে হবে, যারা দেশের শান্তি পূর্ণ অবস্থা মানতে চায় না, এরাই কোমলমতি সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ তৈরী করে রাজনৈতিক অবস্থান দৃঢ় করতে চাচ্ছে । কারণ তারা জানে এই দেশ শান্তিপ্রিয় মুসলিম প্রগতিশীলদের দেশ , যদি ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়, এই দেশের মানুষেরা সহজে ছেড়ে দিবে না ,তাও আবার জাতির জনকের ভাস্কর্য। ধর্মকে পুঁজি করে জাতির জনকের ভাস্কর্যকে বিতর্কিত করার সুযোগে সৃষ্টি করছে ঘোলাটে অস্থিতিশীল পরিবেশ। এক দিকে আবেগ অনুভুতির ধর্ম অন্য দিকে ভালোবাসার প্রাণ পুরুষ জাতির জনকের ভাস্কর্যের সন্মান রক্ষা। ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে তথা কথিত আলেম নামধারী বক্তারা ওয়াজ মাহফিলে যেভাবে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছেন , এতে করে মনে হচ্ছে ইসলাম মানেই হচ্ছে ভাস্কর্য হতে না দেওয়া । যেখানে বিশ্বের কোন মুসলিম দেশে ভাস্কর্য নিয়ে বিন্দু মাত্র বিতর্ক নেই , সেখানে বাংলাদেশের কয়েক জন কথিত আলেম ,মুসলিম বিশ্বকে কি বার্তা দিতে চায় ? ভাবটা এমন যে ,বাংলাদেশের এরাই হলো সর্বশ্রেষ্ট সর্ব জান্তা-আলেম, আর অন্য দিকে মিসর ,সৌদি ,ইরানের সমস্ত আলেমরা জ্ঞান বুদ্ধি-হীন ,মূর্খ । এই বিশেষ চক্রটি মাদক ,নেশা ,অশ্লীলতা,ঘুষ দুর্নীতির বিরুধ্বে কথা না বলে, নীতি-নৈতিকতা সমৃদ্ধ মানবিক আদর্শের আলোচনা বাদ দিয়ে, দেশকে নব্য আফগানিস্তান বানানোর বিশেষ মহড়ায় ব্যাস্ত । পরিশেষে একটি কথা বলতে হয় , পথ ভ্রষ্ট আলেমেরা ধর্মীয় আবরণে দেশবিরোধী গভীর চক্রান্তে লিপ্ত । আমাদেরকে আরো সাবধান হতে হবে।
---------হাসিব চৌধুরী ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন